চিয়াসিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়াসিডে প্রায় ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (যার বেশিরভাগই ফাইবার), ৪ গ্রাম প্রোটিন, এবং ৮ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এবং জিঙ্কের মতো খনিজ পদার্থও রয়েছে।
চিয়াসিডের উপকারিতাঃ
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ চিয়াসিড ফাইবারে ভরপুর। এটি পানি শোষণ করে এবং পেটে এক ধরনের জেলি তৈরি করে, যা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা অনুভূতি দেয়। এতে ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ চিয়াসিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। এটি রক্তচাপ কমাতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ চিয়াসিডের দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য।
- পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়াসিড হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎসঃ চিয়াসিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালোঃ চিয়াসিড ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফরাসের একটি ভালো উৎস। এই খনিজ পদার্থগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে।
- শক্তি বৃদ্ধি করেঃ চিয়াসিড একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস। এর উচ্চ প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি বিশেষত অ্যাথলেটদের জন্য উপকারী।
চিয়াসিড ব্যবহারের পদ্ধতিঃ চিয়াসিড সহজেই বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এর নিরপেক্ষ স্বাদ থাকার কারণে এটি মিষ্টি এবং ঝাল উভয় ধরনের খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে যায়।
১. চিয়াসিড জেল তৈরিঃ
- চিয়াসিড পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি একটি জেলি ধরনের পদার্থে রূপান্তরিত হয়।
- ১ কাপ পানির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চিয়াসিড মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এটি পানীয়, স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
২. স্মুদি এবং জুসে মেশানোঃ চিয়াসিড স্মুদি বা জুসের মধ্যে যোগ করে পুষ্টি বৃদ্ধি করা যায়।
৩. সালাড বা স্যুপে ব্যবহারঃ চিয়াসিড সালাড বা স্যুপের উপরে ছিটিয়ে দেওয়া যায়। এটি স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ উভয়ই বাড়ায়।
৪. বেকিংয়ে ব্যবহারঃ চিয়াসিড বিভিন্ন বেকড খাবারে (যেমন প্যানকেক, ব্রেড বা কেক) যোগ করা যায়। এটি খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ায় এবং ক্রাঞ্চি টেক্সচার দেয়।
৫. পুডিং তৈরিঃ চিয়াসিড দিয়ে সহজেই পুডিং তৈরি করা যায়। এটি দুধ বা নারকেল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মিষ্টি হিসেবে পরিবেশন করা যায়।
সতর্কতাঃ
- চিয়াসিড স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়।
- অনেক ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত চিয়াসিড হজমজনিত সমস্যা (যেমন গ্যাস বা পেট ব্যথা) তৈরি করতে পারে।
- এছাড়া চিয়াসিড খাওয়ার আগে পানি শোষণ করতে দেয়া উচিত, কারণ এটি শুকনো অবস্থায় গলা আটকে যেতে পারে।
চিয়াসিড একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এর ব্যবহারের পদ্ধতিও সহজ এবং এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা সম্ভব। তবে, পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে এটি গ্রহণ করাই স্বাস্থ্যকর।